রাজধানীর সদরঘাট টার্মিনালে বাড়ছে যাত্রীর চাপ
২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৩ এএম | আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২৫, ০১:৫৩ এএম

দীর্ঘদিন পর স্বপ্নের বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাগপত্র গুছিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ। সড়ক, রেলপথে যাত্রীদের আনাগোনা বাড়ছে, পাশাপাশি ব্যস্ত হয়ে উঠছে নৌপথ। রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ছুটেন প্রায় এক কোটি ২০ লাখ মানুষ। অতিরিক্ত জনসমাগমের কারণে সড়ক-মহাসড়কে তৈরি হয় ভীষণ চাপ, তৈরি হয় নানা জটিলতা, ভাড়া বৃদ্ধির নানা সিন্ডিকেট তৈরি হয়, যাত্রীদের বাড়ে ভোগান্তি। অন্যদিকে যানজটমুক্ত, আরামদায়ক ও নিরাপত্তার দিক থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের নৌপথের জনপ্রিয়তা অনেক পুরোনো। সড়ক ও রেলপথ থাকার পরও দেশের অনেক এলাকার মানুষের কাছে নৌপথ এখনো কাক্সিক্ষত ও স্বস্তিময় যোগাযোগ ব্যবস্থা। ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের পর বর্তমান দেশের প্রেক্ষাপটে জনমানুষের মনে চেপে বসেছে এক রকমের ভয়, পতিত সরকারের পেতাত্মারা ঘাপটি মেরে বসে আছে দেশকে বিশৃঙ্খল-অস্থিতিশীল করার জন্য।
বেসরকারি এক পরিসংখ্যান বলছে, বিগত আট মাসে সড়কপথে প্রায় এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই ও ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
এতে সড়কপথে গণপরিবহনে ডাকাতির আতঙ্কে আছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা ও বাসমালিকরা। এসব কারণে ঈদের সময়ে নৌপথে যাত্রীর চাপ পড়বে বলে আশা করছেন নৌপরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও যাত্রী টানতে নানা উদ্যোগ লঞ্চ মালিক সমিতির ঈদযাত্রাকে ঘিরে মন্ত্রণালয়ের দেয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করবে লঞ্চ মালিক সমিতি। লঞ্চে যাত্রীসেবা নিশ্চিতকরণ, মাঝপথে যাত্রী উঠা-নামা না করানো, লঞ্চে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, বয়ার রাখাসহ যাত্রী সেবা নির্বিঘœ করতে সতর্কভাবে কাজ করছেন তারা। ঈদযাত্রাকে ঘিরে যাত্রীদের আকর্ষণ করতে তারা সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলতে সতর্কতার সাথে কাজ করছে। যাত্রীদের কোনো ভোগান্তি যেন না হয় সেটি নিয়ে বেশ তৎপর লঞ্চ মালিকরা। ঈদযাত্রায় নৌপথে দুর্ঘটনা এড়াতে ঈদের আগে পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সূত্রে জানা যায়, আগে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীর ৩৫ শতাংশ নৌপথে যেতেন। পদ্মা সেতু চালু ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটায় এখন তা প্রায় ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২২ সালে পদ্মা সেতু চালুর পর দক্ষিণাঞ্চলমুখী লঞ্চযাত্রী অনেক কমে গেছে। বিশেষ করে মহাসড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন নদীর ওপর সেতু হওয়া এবং সদরঘাটমুখী সড়কে তীব্র যানজটের ভোগান্তির কারণে লোকজন এখন লঞ্চে তেমন একটা যাতায়াত করতে চান না তবে পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি ও জীবন নাশের ভয়ে অনেকে নৌপথে চলাচল করে। গণপরিবহনের তুলনায় নৌপথে চলাচল শান্তিময় ও আরামদায়ক। বরিশাল, ভা-ারিয়া ও ঝালকাঠিগামী লঞ্চযাত্রী একেবারেই কমে গেছে। ঢাকা-বরিশাল রুটে আগে ১৮টি লঞ্চ চললেও এখন চারটিতে নেমে এসেছে। কখনো কখনো একটি লঞ্চও চলে। তবে চাঁদপুর, ভোলার চরফ্যাসন, লালমোহন ও বরগুনা রুটে লঞ্চ তেমন কমেনি।
স্থানীয় যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ফলে সদরঘাটের চাপ কমলেও গত কয়েক দিনে যাত্রীর চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ঈদের প্রস্ততির অংশ হিসেবে লঞ্চগুলোর রঙ করা হচ্ছে। যদিও আগের মতো ভিড় এবং লোকজনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগের তুলনায় লঞ্চ কমেছে। ঢাকা থেকে প্রায় ৫০টি নৌরুটে আগে লঞ্চ ছিল ২২৫টি। যাত্রী কমায় এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০টি। যাত্রী সঙ্কটে কমেছে নৌপথও। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চের ম্যানেজার ও সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা থেকে বরিশালগামী লঞ্চের ডেকের ভাড়া ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকা নেয়া হয়। কিন্তু ঈদের সময় ডেকের ভাড়া ৪০০, সিঙ্গেল কেবিন এক হাজার ২০০ ও ডাবল কেবিনের ভাড়া দুই হাজার ৪০০ টাকা নেয়া হয়। তবে যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে ভাড়া না বাড়ানোর দাবি জানান লঞ্চ মালিক সমিতির নেতারা। তাসরিফ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার আকতার হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় লঞ্চ রুটে প্রভাব পড়েছে। ঈদের আগে যাত্রীদের চাপে বন্ধ হয়ে যেত ঘাট। কিন্তু এখন সেটি স্বপ্নের মতো। আমাদের লঞ্চে অগ্রিম টিকিট বুকিং নেই। ঈদের আগে খুব বেশি হলে তখন ফোনে যোগাযোগ করলেই হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর শুধু বরিশাল, পটুয়াখালী এবং চাঁদপুরই নয়, সারাদেশের নৌপথে তার প্রভাব পড়েছে। আগের মতো যাত্রীর চাপে ঘাট বন্ধ হওয়ার ঘটনা আর ঘটছে না। ঈদের আগে আগাম টিকিটও এখন আর প্রয়োজন হয় না। এদিকে, সুন্দরবন-৩ লঞ্চের সুপারভাইজার ইমরান আলী জানান, আগের চিত্র এখন আর নেই। একসময় যেই রুটে ৩০টি লঞ্চ চলত, সেখানে এখন ৯-১০টি লঞ্চই চলাচল করছে। তবুও ঈদের জন্য লঞ্চগুলো মেরামত করা হয়েছে। তারা বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর চাঁদপুর, ভোলা, চরফ্যাশন, লালমোহন, বরগুনা অঞ্চলে তেমন প্রভাব না পড়লেও বরিশাল, ভা-ারিয়া, ঝালকাঠি অঞ্চলের লঞ্চ সংখ্যা কমেছে। তবে ঈদের আগে সদরঘাটে লঞ্চের সংখ্যা বেড়ে যায়। এদিকে এবারের ঈদকে সামনে রেখে ডেকের ভাড়া না বাড়লেও বেড়েছে কেবিনের ভাড়া।
বরিশালগামী লঞ্চের সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ২০০ টাকা বাড়িয়ে এক হাজার ২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিনের ভাড়া ৪০০ টাকা বাড়িয়ে দুই হাজার ৪০০ টাকা করা হয়েছে। গ্লোরি অব শ্রীনগর-৭ লঞ্চের সুপারভাইজার রাকিব হোসেন আশা করছেন, সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার পর ২৬ রোজার পর থেকে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে। তিনি জানান, যাত্রাপথে দুর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চগুলোর কিছু মেরামতও করা হয়েছে। এমভি অথৈ-১ লঞ্চের সুপারভাইজার সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার লঞ্চের বয়স মাত্র তিন বছর, তাই বেশি মেরামত করার প্রয়োজন পড়েনি। তবে ঈদ সামনে রেখে ভিড় বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ঈদযাত্রা শুরু হলেও সদরঘাটের ঐতিহ্য ও লঞ্চ যাত্রার শত বিচিত্র্য গল্পগুলো যেন ক্রমেই অতীত হয়ে উঠছে। লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, আগে ঢাকা থেকে ৪৩টি নৌপথে ২২৫টির মতো লঞ্চ চলাচল করত। এখন লঞ্চের সংখ্যা ১৯০। যাত্রী সঙ্কটে কমেছে নৌপথও। এখন রুট ৩৫টি। প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলে বিভিন্ন পথে। ২৫ মার্চ ঈদুল ফিতরের বিশেষ লঞ্চ সার্ভিস চালু হওয়ায় যাত্রীর ভিড় কিছুটা বাড়ছে বলে মনে করছেন মালিকরা। ঢাকা-বরিশাল রুটে ১৮টি লঞ্চ রয়েছে। অন্য সময় সব না চললেও ঈদের সময় চালু রাখা হবে। অন্য নৌরুটগুলোতেও একই রকম ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

পঙ্গুত্ববরণকারী যুবদল নেতার জন্য তারেক রহমানের ঈদ উপহার

ঈদের চাঁদ দেখা যায়নি বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম দেশে

নীলফামারীতে শতবর্ষী বটগাছের ভেতর থেকে বেরিয়েছে ‘অলৌকিক হাত’!

এবারের ঈদ এক ভিন্ন আবহে, এক নতুন বাস্তবতায়: মুশফিকুল ফজল আনসারী

‘রাস্তাঘাট পুরাই ফাঁকা, এবার আরামদায়ক যাত্রা পাচ্ছি’

গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে যা বললেন রিজভী

রেকর্ড রেমিট্যান্স, বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ ২৫.৪৪ বিলিয়ন ডলার

জুলাই বিপ্লবে নিহত ডা. সজীবের অসুস্থ মাকে তারেক রহমানের অক্সিজেন কন্সান্ট্রেটরসহ ঈদ উপহার

স্বাধীনতা কনসার্ট’-এর ঢাকা টিমের বৈঠক অনুষ্ঠিত

দ্রুত নির্বাচন দিয়ে দেশের মানুষকে বাঁচান : দুলু

শেরপুরে স্বস্তির ঈদ বাজার, নেই অন্যান্য বছরের মতো ভোগান্তি

রাজধানীতে শহীদ পরিবারের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ

প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামবে বিএনপি: মির্জা ফখরুল

বিশাল ভূগর্ভস্থ ক্ষেপণাস্ত্র শহর উন্মোচন করলো ইরানের আইআরজিসি

গফরগাঁওয়ে শেষ মর্হুতে ঈদের বাজার জমে ওঠেছে

ইরানের গ্রেকো-রোমান দল এশিয়া চ্যাম্পিয়ন

রাজশাহীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়,গ্রামীন ট্রাভেলসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা

আশুলিয়ায় অটো রিকশা চালক কে হ'ত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই

বিমসটেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান মিয়ানমারের সরকার প্রধান

জামায়াত সরকার গঠন করলে সাংবাদিকদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা করবে-মতবিনিময়ে বক্তারা